দ্বীনী শিক্ষা কেন আবশ্যক আজকের সমাজে

আধুনিক জীবনে দ্বীনী শিক্ষার ভূমিকা

    বর্তমান বিশ্ব অগ্রগতির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন মানুষের জীবনকে করেছে সহজ, দ্রুত ও আরামদায়ক। কিন্তু এই গতিশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের মাঝেও মানুষ এক ধরনের আত্মিক শূন্যতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। সমাজে বাড়ছে সহিংসতা, দুর্নীতি, চরিত্রহীনতা, পারিবারিক ভাঙন ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা। এই প্রেক্ষাপটে দীনী শিক্ষা তথা ইসলামী জ্ঞান ও চেতনা আজকের সমাজে অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।

দীনী শিক্ষার সংজ্ঞা ও প্রকৃতি:

    দ্বীনী শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা যা কুরআন, হাদীস, ইসলামী ফিকহ, আখলাক, তাজবিয়াহ ইত্যাদির মাধ্যমে একজন মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দেয়, নবী (সাঃ)-এর আদর্শ শেখায় এবং জীবনকে শরীয়তের পথে পরিচালিত করে। এটি কেবল মসজিদ বা মাদরাসায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং দ্বীনী শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তিকে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা।

আধুনিক জীবনে দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা:

১. নৈতিক ও চারিত্রিক গঠনে ভূমিকা:
    দ্বীনী শিক্ষা মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে, তাকে সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, সহানুভূতিশীল, সহনশীল ও বিনয়ী হিসেবে গড়ে তোলে। আজকের সমাজে যখন তরুণ প্রজন্মের মাঝে মাদকাসক্তি, বেহায়াপনা ও চরিত্রহীনতা বাড়ছে, তখন একমাত্র দ্বীনী শিক্ষাই পারে তাদের সঠিক পথ দেখাতে।


২. আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ:
    বহু মানুষ আধুনিক জীবনের চাপ, প্রতিযোগিতা ও দুশ্চিন্তায় ভুগে মানসিক অস্থিরতায় আক্রান্ত হচ্ছে। দ্বীনী শিক্ষা মানুষকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা, তাকওয়া ও সবরের শিক্ষা দেয়, যা তাকে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়।


৩. পারিবারিক বন্ধন মজবুত করে:
    ইসলামে পরিবার হলো সমাজের ভিত্তি। দ্বীনী শিক্ষা পরিবারে দায়িত্ববোধ, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ, স্ত্রী-পতি ও সন্তানদের প্রতি কর্তব্য পালনের শিক্ষা দেয়। এতে করে সংসার হয় কল্যাণময় ও শান্তিপূর্ণ।


৪. সামাজিক ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা:
দ্বীনী শিক্ষা মানুষকে অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শেখায়। এটি ন্যায়বিচার, মানবতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


৫. আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা:
পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের নতুন প্রজন্ম আজ নিজের ধর্ম, ইতিহাস ও সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে। দ্বীনী শিক্ষা তাদের ইসলামী পরিচয়, ঐতিহ্য ও গৌরব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে, যা আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি করে।


দ্বীনী শিক্ষা বনাম আধুনিক শিক্ষা:

    বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশেই ধর্মনিরপেক্ষ ও বস্তুবাদী চিন্তাধারায় পরিচালিত। এই শিক্ষা মানবিক গুণাবলি, আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক উন্নয়নের পরিবর্তে কেবল চাকরি ও আর্থিক সাফল্যের দিকে ধাবিত করছে। এর ফলে মানুষ যেমন বাহ্যিক উন্নত হচ্ছে, তেমনি ভেতরে ভেতরে ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে।


    অন্যদিকে,দ্বীনী শিক্ষা কেবল প্যারাডাইম শিফট নয় বরং জীবনদর্শনের মৌলিক পরিবর্তন সাধন করে। এটি মানুষকে তার জীবনের উদ্দেশ্য, জীবনের লক্ষ্য এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।


দ্বীনী শিক্ষা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ:

দ্বীনী শিক্ষা আজ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। যেমন:

  • সমাজে এর অবমূল্যায়ন
  • আধুনিক পাঠ্যক্রমের সাথে সমন্বয়ের অভাব
  • মাদ্রাসা গুলোর সীমিত সুযোগ-সুবিধা

  • মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব

    এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্বীনী শিক্ষাকে আরও কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তোলা।

সমাধান ও করণীয়:
১. পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য মৌলিক দ্বীনী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
২. মসজিদ, মাদরাসা ও স্কুলে যুগোপযোগী ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা।
৩. দ্বীনী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন।
৪. অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইসলামিক কনটেন্টের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি।
৫. ইসলামিক স্কলার ও আলেমদের সমাজ গঠনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা।


    আধুনিক সমাজ যতই উন্নত হোক না কেন, মানুষ কখনোই আত্মিক প্রশান্তি, নৈতিকতা ও সত্যিকারের মানবিকতা ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। এইসব গুণাবলির ভিত্তি হলো দ্বীনী শিক্ষা। তাই সময় এসেছে দ্বীনী শিক্ষাকে জীবনের মূলধারা হিসেবে গ্রহণ করার। ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে দ্বীনী শিক্ষাই হতে পারে আমাদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনের সর্বোত্তম পাথেয়।

আপনার মতামত নিচের কমেন্টে জানান এবং শেয়ার করে অন্যদেরও উপকৃত করুন।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনার পছন্দ হতে পারে