ইলমের ফজিলত ও গুরুত্ব


    ইলম বা জ্ঞান, ইসলামী দৃষ্টিতে একটি মহামূল্যবান সম্পদ। জ্ঞান ছাড়া দ্বীনের গভীরতা বোঝা যায় না, আল্লাহর পরিচয় পাওয়া যায় না, এবং একজন মুমিন তাঁর জীবনযাত্রাকে শরিয়তের আলোকে পরিচালনা করতে পারেন না। কুরআন মাজীদ ও রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হাদীসে ইলমের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, একে ঈমানের পর সর্বোচ্চ মর্যাদায় স্থাপন করা হয়েছে।

📖 কুরআনের আলোকে ইলমের মর্যাদা:

🔹 ১. ইসলামের প্রথম আদেশই ছিল জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ:

“পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।”
— (সূরা আল-আলাক: ১)

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি প্রথম ওহিই ছিল ‘পড়ো’। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা সমগ্র মানবজাতিকে জ্ঞানের দিকে আহ্বান জানান। এটি প্রমাণ করে, জ্ঞান হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি।

🔹 ২. আল্লাহ জ্ঞানীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন:

“আল্লাহ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা উন্নীত করবেন।”
— (সূরা আল-মুজাদালাহ: ১১)


এ আয়াত অনুযায়ী, ইমানের সাথে যদি জ্ঞান থাকে, তবে সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট আরও উচ্চ মর্যাদায় আসীন হয়।
 

🔹 ৩. জ্ঞানীরা অজ্ঞদের থেকে আলাদা:

“বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান?”
— (সূরা আজ-জুমার: ৯)


এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, আল্লাহর দৃষ্টিতে জ্ঞানীর অবস্থান সর্বদা আলাদা ও সম্মানজনক।
 

📜 হাদীসের আলোকে ইলমের গুরুত্ব:

🕋 ১. জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয:

“জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য ফরয।”

— (ইবনে মাজাহ)
এই হাদীসের আলোকে বোঝা যায়, দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান (ফরযে আইন) অর্জন করা প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য।

 

🕋 ২. জ্ঞানার্জনকারীর জন্য জান্নাতের পথ সহজ হয়:

“যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।”
— (সহীহ মুসলিম)
দুনিয়ার একটি মহৎ চেষ্টা, আখিরাতের চিরস্থায়ী পুরস্কারের পথে রূপান্তরিত হয়।

 

🕋 ৩. ফেরেশতাগণ জ্ঞানীদের প্রতি সন্তুষ্ট:

“ফেরেশতারা জ্ঞানার্জনের পথে বের হওয়া ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাদের পায়ের নিচে ডানা বিছিয়ে দেয়।”
— (আবু দাউদ)


এটি একটি অলৌকিক মর্যাদা, যা কেবল জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে লাভ করা যায়।

 

🌱 ইলমের প্রকারভেদ ও বাস্তব প্রয়োগ:

ইলম দুই প্রকার:

ইলমে দীন (দ্বীনি জ্ঞান): যেমন কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আকীদা ইত্যাদি। এটি ফরযে আইন।


ইলমে দুনিয়া (জাগতিক জ্ঞান): যেমন চিকিৎসা, প্রকৌশল, গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি। দ্বীনের সেবা ও কল্যাণে ব্যবহৃত হলে এটি ইবাদতের মর্যাদা পায়।

🔸 শুধু মুখস্ত নয়, ইলমের মূল উদ্দেশ্য হলো আমলে রূপান্তর। জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি তা জীবনে প্রয়োগ করাটাই প্রকৃত সফলতা।


    ইলম হল সেই দীপ্তশিখা যা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যায়। একমাত্র জ্ঞানই পারে আমাদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে দিতে এবং কিয়ামতের দিন আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে। তাই আসুন আমরা নিজে দ্বীনি ও দুনিয়াবি ইলম অর্জন করি, সন্তানদেরও সেই পথে পরিচালিত করি, এবং সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিই।

আপনার মতামত নিচের কমেন্টে জানান এবং শেয়ার করে অন্যদেরও উপকৃত করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

আপনার পছন্দ হতে পারে